পরিণীত
আমি কিছুদিন থেকেই লক্ষ্য করছি একটা ছেলে আমার পিছু নিচ্ছে। কলেজ যায় তখনও সে আমার পিছু পিছু যায়। আবার আসি তখন ও আমার পিছু পিছুই আসে। ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দেওয়ার সময়ও খেয়াল করি দূরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে আমায়। তবে আজ অব্দি আমার সামনে আসেনি। বলতে গেলে তাকে কিছু বলার কোনো অধিকার আমার নাই। কারন আজ অব্দি আমার সামনে এসে আমায় কিছু বলেনি বা আমাকে বিরক্ত করেনি। কিন্তু তবুও আমার একটু খারাপ লাগে। এলাকায় আমার বাবার একটু সম্মান আছে। কেউ যদি দেখে কোনো ছেলে আমায় ফোলো করে তাহলে নিশ্চয় সেটা নিয়ে কথা হবে। আর আপনারাতো জানেনই প্রতিবেশী কেমন হয়। তাই একদিন আমার বেষ্টিকে নিয়ে তার সামনে গেলাম।
.
আমিঃ এই ছেলে আমায় ফলো কেন করো?
সেঃ…..
আমিঃ কি হলো কথা বলছো না কেন?
সেঃ…..
আমিঃ দেখো আমাকে আর ফলো করবে না।
এইটা বলেই সেখান থেকে চলে এলাম। কিন্তু পরেরদিন আবার আগের মতোই অবস্থা। সে আবার আমায় ফলো করতে শুরু করে। রাস্তায় তার আর আমার দুরত্ব বেশখানিকটা থাকে। তবে মানুষ কেমন সেটা তো জানেন। একটু কিছু পেলেই সেটাকে নিয়ে কথা করতে তাদের ভালোই লাগে। তাই একটু ভয়েই ছিলাম। তাকে আরেকদিন গিয়ে বারন করে এসেছি। কিন্তু সে শুনেনি। সেইদিনের পর থেকে দেখতাম যখনই আমার চোখে চোখ পরতো সে চোখ নামিয়ে নিত। এইবার এলাকায় একটু একটু কানাঘুষা হতেও শুরু করেছে। মা আমাকে একদিন বলেওছে যেন তাদের মান সম্মানের একটু খেয়াল রাখি। আসলে আমার বাবা একজন হাজি। আমাদের বাড়িকে সবাই হাজির বাড়ি হিসেবেই চিনে। আমার পরিবারের সব মেয়েই ছোট থেকেই পর্দা প্রতি একটু বেশিই যত্নশীল। আর আপনারাতো জানেন একটা সাধারন পরিবারে কোনো ভুল হলে ততোটা কথা হয় না যতোটা একটা হাজির পরিবারকে নিয়ে হয়। তাদের যদি সামান্য ভুল হয় সেটাও খুব বড় আকারে রটিয়ে পরে। সেই ভয়টায় ছিল আমার মায়ের। মায়ের ভয়টাও অযৌক্তিক না। তাই পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাওয়ার আগেই আমি বাবাকে সব বলে দিই। বাবা বলে সে একটা ব্যবস্থা করবে। এরপর আমি জানি না বাবা তাকে কি বলেছে। দেখতাম সেইদিনের পর থেকে সে আমায় ফলো করতো না। তাই বলে আমায় দেখা ছেড়ে দেই নি। যখন কলেজ যেতাম তখন খেয়াল করতাম সে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কলেজ থেকে আসার সময়ও সেই মোড়েই দেখতাম তাকে। অপলকভাবে তাকিয়ে থাকতো আমার দিকে।
—-পরিণীত – Love Story Bangla—-
একদিন কলেজ যাওয়ার জন্য আমার বেষ্টির বাসাই গেলাম তাকে ডাকতে। কিন্তু সে অসুস্থ, কলেজ যেতে পারবে না। ভাবলাম আমি একাই গিয়ে কি করবো। আবার মনে হলো বাড়িতে বসে থেকেই বা কি করবো তার থেকে কলেজ যাওয়াই ভালো। তবে আরেকটা কারন ছিল। কারনটা হলো একজোড়া চোখ আমাকে দেখার জন্য মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। আসলে তার প্রতি কেন জানি একটু দুর্বলতা কাজ করে। তবে কলেজ যাওয়ার পথে আজ তাকে দেখতে পায়নি। কেন জানি মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। একটা ক্লাসেও মন দিতে পারলাম না। বারবার একটাই কথা মনে আসে সে কি অসুস্থ নাকি কিছু হয়েছে। বিষন্ন মন নিয়ে কোনো রকমে ক্লাস করে বাড়ির পথে রওনা দিলাম। হঠাৎ মনে হলো কিছু ছেলে আমার পিছু করছে আর কটুক্তি করছে। আমি আমার চলার গতি বাড়িয়ে দিলাম। আসলে আজকাল মেয়েরাকে মানুষ মনে করে না কিছু মানুষ। যা ইচ্ছে তা বলে। তাদের জন্য আমরা আজ পরাধীন। যাইহোক আমি জোড়ে জোড়ে হাটছি। তারা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করছে আমি বুঝতে পারছি। একবার মনে হলো আমি কেন পালাচ্ছি? আমি তো কোনো অন্যায় করছি না। তবে কি জানেন সমাজে অন্যায় ছেলে করুক বা মেয়ে দোষটা সবসময় মেয়েদেরই হয়। তাই না থেমে এগিয়ে যেতে লাগলাম। হঠাৎ দেখলাম সে আমার সামনে দাড়িয়ে। তাকে দেখে থমকে গেলাম আর একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। কেন জানি তার প্রতি আমার বিশ্বাস ছিল সে আমার কোনো ক্ষতি হতে দেবে না। সে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। সে আমার কাছে এসে আমাকে যেতে ইশারা করল আর ছেলেদের দিকে এগিয়ে গেল। কিন্তু আমার মন আমাকে যেতে দিল না। সেখানে দাড়িয়ে দেখতে লাগলাম। সে তাদের সাথে কথা বলছে। তারা তাকে অকথ্য ভাষায় গালি দিচ্ছে। একপর্যায়ে তারা তার গালে একটা চড় মারলো। খুব ইচ্ছে করছিল তাদের সবকটাকে জুতা দিয়ে পিটাতে। অমানুষগুলো। তাকে চড় মারার পর আরো কিছু গালি দিয়ে চলে গেল। সে আমার কাছে এসে বলল
.
সেঃ চলো তোমাকে এগিয়ে দিয়ে আসি।
আমি কিছু না বলে তার পেছনে হাটতে লাগলাম। মানুষ যে এতোটা শান্ত স্বভাবের হতে পারে তাকে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। সে আমাকে বাড়ি অব্দি রাখতে এলো না। বাড়ি থেকে কিছু দুর সামনেই বলল এখন চলে যাও। আমি কোনো কথা না বলেই চলে এলাম।
তারপর বেশ কিছুদিন তাকে আর দেখতে পেতাম না। না মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতো না আমার পিছু করতো। আমার খুব খারাপ লাগতো।
একদিন আমার এক ফ্রেন্ড এসে বলল তার নাকি ভাতিজি হয়েছে। তাই আমাদের সবাইকে ট্রিট দেবে। সে আমাদের পাশের একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেল। কিন্তু সেখানে গিয়ে যা দেখলাম তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। সে বসে আছে অন্য একটা মেয়ের সাথে। ঘটনাটা আমার সহ্য হলো না। তাই ফ্রেন্ডদের বলে সেখান থেকে চলে এসে বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। সে আমায় দেখেছে। হঠাৎ দেখলাম সেও বাইরে এলো। তারপর আমার কাছে এসে দাড়ালো। আমি তার হাত ধরে রেস্টুরেন্টের পেছনে নিয়ে গেলাম।
আমিঃ আমি ছাড়াও আর কতজনকে ফলো করো?
সেঃ তুমিই ফাস্ট
আমিঃ আমার পরে আর কতোজন আছে?
সেঃ তুমিই লাস্ট।
পরিণীত
সে প্রত্যেকটা কথাই নিচ দিকে মুখ করে বলছে।
আমিঃ এই মেয়েটা কে?
সেঃ আমার বোন। কোনোদিন রেস্টুরেন্টে খেতে আসেনি তাই নিয়ে এসেছি।
আমিঃ আগে কয়টা রিলেশন ছিল?
সেঃ তুমি ছাড়া আমার জীবনে অন্য কেউ নাই। আসেনি আর আসবেও না।
আমিঃ তাহলে প্রপোজ করোনি কেন?
সেঃ তোমাকে প্রপোজ করার যোগ্যতা আমার নাই।
আমিঃ তাহলে ফলো করো কেন?
সেঃ তোমাকে না দেখে থাকার ক্ষমতা আমার নেই।
আমিঃ ভালোই ফ্লিমি ডাইলোগ মারতে পারো দেখছি। আমার জন্য কি করতে পারবে?
সেঃ তোমাকে বড় কোনো গিফ্ট দিতে পারবো না তবে ভালোবেসে আকড়ে রাখতে পারবো। তোমাকে বড় কোনো surprise দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই তবে পাঁচ টাকার বাদাম কিনে খেতে খেতে তোমার সাথে গল্প করে বিকেলটা পার করতে পারবো।
আমিঃ হয়েছে। আমার বাবার সামনে গিয়ে আমাকে চাইতে পারবে?
সেঃ জানি না।
আমিঃ গাধা। কাল তোমার বাবা মাকে নিয়ে আমাদের বাড়ি আসবে। তোমার জন্য অপেক্ষা করবো।
পরিণীত
.
সবার মতো আমাদের পরিবারও আমাদের বিয়ে মেনে নিতে চাইনি। তাই বলে আমরা পালিয়ে যায়নি। বাবাকে অনেক বার আমি বুঝিয়েছি। আর সে…. সে তো বাবাকে মানানোর জন্য কি না করে নি। অবশেষে বাবা মেনে নিয়েছিল।
আজ চার বছরের সংসার আমাদের। একটা ফুটফুটে পরি এসেছে আমাদের ঘরে। অস্ফুটত মুখে বাবা বাবা বলতে পারে। খুব সুখেই আছি। দোয়া করবেন আমাদের জন্য।
—-পরিণীত – Love Story Bangla—-
আজকের মতো এখানেই সমাপ্তি।