আমাকে একটি কথা দাও যা আকাশের মতো সহজ মহৎ বিশাল, গভীর; – সমস্ত ক্লান্ত হতাহত গৃহবলিভুকদের রক্তে মলিন ইতিহাসের অন্তর ধুয়ে চেনা হাতের মতন, আমি যাকে আবহমান কাল ভালোবেসে এসেছি সেই নারীর। সেই রাত্রির নক্ষত্রালোকিত
Continue readingCategory: জীবনানন্দ দাশ
জীবনানন্দ দাশ (ফেব্রুয়ারি ১৮, ১৮৯৯ – অক্টোবর ২২, ১৯৫৪; বঙ্গাব্দ ফাল্গুন ৬, ১৩০৫ – কার্তিক ৫, ১৩৬১)[২] ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক, প্রাবন্ধিক। তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অন্যতম।[১] জীবনানন্দের প্রথম কাব্যে নজরুল ইসলামের প্রভাব থাকলেও দ্বিতীয় কাব্য থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন মৌলিক ও ভিন্ন পথের অনুসন্ধানী।
মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শেষ ধাপে তিনি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন এবং ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে যখন তার জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছিল ততদিনে তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় কবিতে পরিণত হয়েছেন।
গ্রামবাংলার ঐতিহ্যময় নিসর্গ ও রূপকথা-পুরাণের জগৎ জীবনানন্দের কাব্যে হয়ে উঠেছে চিত্ররূপময়, তাতে তিনি ‘রূপসী বাংলার কবি’ অভিধায় খ্যাত হয়েছেন। বুদ্ধদেব বসু তাঁকে নির্জনতম কবি বলে আখ্যায়িত করেছেন। আবদুল মান্নান সৈয়দ তাঁকে শুদ্ধতম কবি বলেছেন।[৫] সমালোচকদের অনেকে তাঁকে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল-পরবর্তী বাংলাসাহিত্যের প্রধান কবি বলে মনে করেন।[৬] জীবনানন্দের বনলতা সেন কাব্যগ্রন্থ নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলনে পুরস্কৃত (১৯৫৩) হয়। ১৯৫৫ সালে শ্রেষ্ঠ কবিতা গ্রন্থটি ভারত সরকারের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করে।[১] জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলোর মাঝে রয়েছে রূপসী বাংলা, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, বেলা অবেলা কালবেলা, শ্রেষ্ঠ কবিতা ইত্যাদি।
জীবনানন্দ দাশ প্রধানত কবি হলেও বেশ কিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা ও প্রকাশ করেছেন। তবে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে অকাল মৃত্যুর আগে তিনি নিভৃতে ২১টি উপন্যাস এবং ১০৮টি ছোটগল্প রচনা করেছিলেন যার একটিও তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়নি। তাঁর জীবন কেটেছে চরম দারিদ্রের মধ্যে। বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধকালে অনপনেয়ভাবে বাংলা কবিতায় তাঁর প্রভাব মুদ্রিত হয়েছে।
এই পৃথিবীতে আমি অবসর নিয়ে শুধু আসিয়াছি – জীবনানন্দ দাশ
এই পৃথিবীতে আমি অবসর নিয়ে শুধু আসিয়াছি — আমি হৃষ্ট কবি আমি এক; — ধুয়েছি আমার দেহ অন্ধকারে একা একা সমুদ্রের জলে; ভালোবাসিয়াছি আমি রাঙা রোদ, ক্ষান্ত কার্তিকের মাঠে — ঘাসের আঁচলে ফড়িঙের মতো আমি
Continue readingনীলিমা – জীবনানন্দ দাশ
রৌদ্র ঝিল্মিল, উষার আকাশ, মধ্য নিশীথের নীল, অপার ঐশ্বর্যবেশে দেখা তুমি দাও বারে বারে নিঃসহায় নগরীর কারাগার-প্রাচীরের পারে! -উদ্বেলিছে হেথা গাঢ় ধূম্রের কুণ্ডলী, উগ্র চুল্লিবহ্নি হেথা অনিবার উঠিতেছে জ্বলি, আরক্ত কঙ্করগুলো মরুভূর তপ্তশ্বাস মাখা, মরীচিকা-ঢাকা!
Continue readingযদি আমি ঝরে যাই একদিন – জীবনানন্দ দাশ
যদি আমি ঝরে যাই একদিন কার্তিকের নীল কুয়াশায়; যখন ঝরিছে ধান বাংলার ক্ষেতে-ক্ষেতে ম্লান চোখ বুজে, যখন চড়াই পাখি কাঁঠালীচাপাঁর নীড়ে ঠোঁট আছে গুজে, যখন হলুদ পাতা মিশিতেছে খয়েরি পাতায়, যখন পুকুরে হাঁস সোঁদা জলে
Continue readingনগ্ন নির্জন হাত – জীবনানন্দ দাশ
আবার আকাশে অন্ধকার ঘন হয়ে উঠেছে: আলোর রহস্যময়ী সহোদরার মতো এই অন্ধকার। যে আমাকে চিরদিন ভালোবেসেছে অথচ যার মুখ আমি কোনাদিন দেখিনি, সেই নারীর মতো ফাল্গুন আকাশে অন্ধকার নিবিড় হয়ে উঠেছে। মনে হয় কোনো বিলুপ্ত
Continue readingনির্জন স্বাক্ষর – জীবনানন্দ দাশ
তুমি তা জানো না কিছু, না জানিলে- আমার সকল গান তবুও তোমারে লক্ষ্য ক’রে! যখন ঝরিয়া যাব হেমন্তের ঝড়ে, পথের পাতার মতো তুমিও তখন আমার বুকের ‘পরে শুয়ে রবে? অনেক ঘুমের ঘোরে ভরিবে কি মন
Continue readingলোকেন বোসের জার্নাল – জীবনানন্দ দাশ
সুজাতাকে ভালোবাসতাম আমি — এখনো কি ভালোবাসি? সেটা অবসরে ভাববার কথা, অবসর তবু নেই; তবু একদিন হেমন্ত এলে অবকাশ পাওয়া যাবে এখন শেলফে চার্বাক ফ্রয়েড প্লেটো পাভলভ ভাবে সুজাতাকে আমি ভালোবাসি কি না। পুরোনো চিঠির
Continue readingস্বপ্নের হাত – জীবনানন্দ দাশ
পৃথিবীর বাধা — এই দেহের ব্যাঘাতে হৃদয়ে বেদনা জমে — স্বপনের হাতে আমি তাই আমারে তুলিয়া দিতে চাই। যেই সব ছায়া এসে পড়ে দিনের রাতের ঢেউয়ে — তাহাদের তরে জেগে আছে আমার জীবন; সব ছেড়ে
Continue readingবনলতা সেন – জীবনানন্দ দাশ
হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে, সিংহল সমুদ্র থেকে আরো দূর অন্ধকারে মালয় সাগরে অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকার বিদর্ভ নগরে; আমি ক্লান্ত প্রাণ এক,
Continue readingতোমায় আমি – জীবনানন্দ দাশ
তোমায় আমি দেখেছিলাম বলে তুমি আমার পদ্মপাতা হলে; শিশির কণার মতন শূন্যে ঘুরে শুনেছিলাম পদ্মপত্র আছে অনেক দূরে খুঁজে খুঁজে পেলাম তাকে শেষে। নদী সাগর কোথায় চলে ব’য়ে পদ্মপাতায় জলের বিন্দু হ’য়ে জানি না কিছু-দেখি
Continue readingএই জল ভালো লাগে – জীবনানন্দ দাশ
এই জল ভালো লাগে; বৃষ্টির রূপালি জল কত দিন এসে ধুয়েছে আমার দেহ — বুলায়ে দিয়েছে চুল — চোখের উপরে তার শান — স্নিগ্ধ হাত রেখে কত খেলিয়াছে, — আবেগের ভরে ঠোঁটে এসে চুমা দিয়ে
Continue readingতোমাকে – জীবনানন্দ দাশ
একদিন মনে হতো জলের মতন তুমি। সকালবেলার রোদে তোমার মুখের থেকে বিভা– অথবা দুপুরবেলা — বিকেলের আসন্ন আলোয়– চেয়ে আছে — চলে যায় — জলের প্রতিভা। মনে হতো তীরের উপরে বসে থেকে। আবিষ্ট পুকুর থেকে
Continue readingআকাশলীনা – জীবনানন্দ দাশ
সুরঞ্জনা, ঐখানে যেয়োনাকো তুমি, বোলোনাকো কথা ঐ যুবকের সাথে; ফিরে এসো সুরঞ্জনা , নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে; ফিরে এসো এই মাঠে, ঢেউয়ে; ফিরে এসো হৃদয়ে আমার; দূর থেকে দূরে – আরও দূরে যুবকের সাথে
Continue readingআবার আসিব ফিরে – জীবনানন্দ দাশ
আবার আসিব ফিরে ধানসিড়ির তীরে — এই বাংলায় হয়তো মানুষ নয় — হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে; হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঠাঁলছায়ায়; হয়তো বা হাঁস
Continue readingএকদিন কুয়াশার এই মাঠে – জীবনানন্দ দাশ
একদিন কুয়াশার এই মাঠে আমারে পাবে না কেউ খুঁজে আর, জানি; হৃদয়ের পথ চলা শেষ হল সেই দিন — গিয়েছে যে শান — হিম ঘরে, অথবা সান্ত্বনা পেতে দেরি হবে কিছু কাল — পৃথিবীর এই
Continue readingবুনো হাঁস – জীবনানন্দ দাশ
পেঁচার ধূসর পাখা উড়ে যায় নক্ষত্রের পানে- জলা মাঠ ছেড়ে দিয়ে চাঁদের আহবানে বুনো হাঁস পাখা মেলে- শাঁই শাঁই শব্দ শুনি তার; এক-দুই-তিন চার-অজস্র-অপার- রাত্রির কিনার দিয়ে তাহাদের ক্ষিপ্র ডানা ঝাড়া এঞ্জিনের মতো শব্দে; ছুটিতেছে-ছুটিতেছে
Continue reading