নীরা এবং নীরার পাশে তিনটি ছায়া আমি ধনুকে তীর জুড়েছি, ছায়া তবুও এত বেহায়া পাশ ছাড়ে না এবার ছিলা সমুদ্যত, হানবো তীর ঝড়ের মতো– নীরা দু’হাত তুলে বললো, ‘মা নিষাদ! ওরা আমার বিষম চেনা!’ ঘূর্ণি
Continue readingCategory: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (ইংরেজি : Sunil Gangopadhyay) (৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪ (২১ ভাদ্র, ১৩৪১ বঙ্গাব্দ) – ২৩ অক্টোবর ২০১২)[১] বিংশ শতকের শেষার্ধে আবিভূর্ত একজন প্রথিতযশা বাঙালি সাহিত্যিক। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর পূর্ববর্তী চার দশক তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা-ব্যক্তিত্ব হিসাবে সর্ববৈশ্বিক বাংলা ভাষা-ভাষী জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিত ছিলেন।
বাঙলাভাষী এই ভারতীয় সাহিত্যিক একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামনিস্ট হিসাবে অজস্র স্মরণীয় রচনা উপহার দিয়েছেন। তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার জীবনানন্দ-পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি। একই সঙ্গে তিনি আধুনিক ও রোমান্টিক। তাঁর কবিতার বহু পংক্তি সাধারণ মানুষের মুখস্থ। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় “নীললোহিত”, “সনাতন পাঠক” ও “নীল উপাধ্যায়” ইত্যাদি ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম অধুনা বাংলাদেশের মদারিপুরে। মাত্র চার বছর বয়সে তিনি কলকাতায় চলে আসেন।
১৯৫৩ সাল থেকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কৃত্তিবাস নামে একটি কবিতা পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ একা এবং কয়েকজন এবং ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম উপন্যাস আত্মপ্রকাশ প্রকাশিত হয়।
তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই হল আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি, যুগলবন্দী (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), হঠাৎ নীরার জন্য, রাত্রির রঁদেভূ, শ্যামবাজারের মোড়ের আড্ডা, অর্ধেক জীবন, অরণ্যের দিনরাত্রি, অর্জুন, প্রথম আলো, সেই সময়, পূর্ব পশ্চিম, ভানু ও রাণু, মনের মানুষ ইত্যাদি। শিশুসাহিত্যে তিনি “কাকাবাবু-সন্তু” নামে এক জনপ্রিয় গোয়েন্দা সিরিজের রচয়িতা। মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত তিনি ভারতের জাতীয় সাহিত্য প্রতিষ্ঠান সাহিত্য অকাদেমি ও পশ্চিমবঙ্গ শিশুকিশোর আকাদেমির সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
কেউ কথা রাখেনি – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি ছেলেবেলায় এক বোষ্টুমী তার আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে বলেছিল শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে তারপর কত চন্দ্রভূক অমাবস্যা চলে গেলো, কিন্তু সেই বোষ্টুমী আর এলোনা
Continue readingসেদিন বিকেলবেলা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
সাতশো একান্নতম আনন্দটি পেয়েছি সেদিন যখন বিকেলবেলা মেঘ এসে ঝুঁকে পড়েছিল গোলাপ বাগানে এবং তোমার পায়ে ফুটে গেল লক্ষ্মীছাড়া কাঁটা! তখন বাতাসে ছিল বিহ্বলতা, তখন আকাশে ছিল কৃষ্ণক্লান্তি আলো, ছিল না রঙের কোলাহল ছিল না
Continue readingকবির দুঃখ – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
শব্দ তার প্রতিবিম্ব আমাকে দেখাবে বলেছিল শব্দ তার প্রতিবিম্ব আমাকে দেখাবে বলেছিল গোপনে শব্দ তার প্রতিবিম্ব আমাকে দেখাবে বলেছিল। শব্দ ভেঙে গেল যেন শৃঙ্খলের মতো শব্দ হয় পাহাড়ের চূড়া থেকে খসে পড়া রূপালি পাতার মতো
Continue readingপ্রতীক্ষায় – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
গোলাপে রয়েছে আঁচ, পতঙ্গের ডানা পুড়ে যায় হাওয়া ঘোরে দূরে-দূরে ফুলকে সমীহ করে সূর্যাস্তও থমকে থাকে! দেখো-দেখো আমার বাগানে এক অগ্নিময় ফুল ফুটে আছে তার সৌরভেও কত তাপ! আর সব কুসুমের জীবন-চরিত তুচ্ছ করে সে
Continue readingপ্রেমিকা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
কবিতা আমার ওষ্ঠ কামড়ে আদর করে ঘুম থেকে তুলে ডেকে নিয়ে যায় ছাদের ঘরে কবিতা আমার জামার বোতাম ছিঁড়েছে অনেক হঠাৎ জুতোর পেরেক তোলে! কবিতাকে আমি ভুলে থাকি যদি অমনি সে রেগে হঠাৎ আমায় ডবল
Continue readingসে কোথায় যাবে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
পৌষের পূর্ণিমা রাত ডেকে বললো, যা- সে কোথায় যাবে? নিঝুম মাঠের মধ্যে সে এখন রাজা একা-একা দুন্দুভি বাজাবে? ছিল বটে রৌদ্রালোকে তারও রাজ্যপাট সোনালি কৈশোরে আজ উল্লুকের পাল হয়েছে স্বরাট চৌরাস্তার মোড়ে দাঁতে দাঁত ঘষাঘষি,
Continue readingনারী – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
নাস্তিকেরা তোমায় মানে না, নারী দীর্ঘ-ঈ-কারের মতো তুমি চুল মেলে বিপ্লবের শত্রু হয়ে আছো ! এমনকি অদৃশ্য তুমি বহু চোখে কত লোক নামই শোনেনি যেমন জলের মধ্যে মিশে থাকে জল-রং-আলো— তারা চেনে প্রেমিকা বা সহোদরা
Continue readingনিজের আড়ালে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
সুন্দর লুকিয়ে থাকে মানুষের নিজেরই আড়ালে মানুষ দেখে না সে খোঁজে ভ্রমর কিংবা দিগন্তের মেঘের সংসার আবার বিরক্ত হয় কতকাল দেখে না আকাশ কতকাল নদী বা ঝরনায় আর দেখে না নিজের মুখ আবর্জনা, আসবাবে বন্দী
Continue readingআমি কিরকম ভাবে বেঁচে আছি – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
আমি কীরকম ভাবে বেঁচে আছি তুই এসে দেখে যা নিখিলেশ এই কী মানুষজন্ম? নাকি শেষ পরোহিত-কঙ্কালের পাশা খেলা! প্রতি সন্ধ্যেবেলা আমার বুকের মধ্যে হাওয়া ঘুরে ওঠে, হৃদয়কে অবহেলা করে রক্ত; আমি মানুষের পায়ের কাছে কুকুর
Continue readingনিজের কানে কানে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
এক এক সময় মনে হয়, বেঁচে থেকে আর লাভ নেই এক এক সময় মনে হয় পৃথিবীটাকে দেখে যাবো শেষ পর্যন্ত! এক এক সময় মানুষের ওপর রেগে উঠি অথচ ভালোবাসা তো কারুকে দিতে হবে জন্তু-জানোয়ার গাছপালাদের
Continue readingকবিতা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
আমি তোমাকে এত বেশি স্বপ্নে দেখেছি যে তুমি তোমার বাস্তবতা হারিয়ে ফেলেছো এখনো কি সময় আছে তোমার জীবন্ত শরীর স্পর্শ করার এবং যে ওষ্ঠ থেকে আমার অতি প্রিয় স্বর জন্ম নেয় সেখানে চুম্বন দেবার?… আমি
Continue readingভালোবাসা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
ভালোবাসা নয় স্তনের ওপরে দাঁত? ভালোবাসা শুধু শ্রাবণের হা-হুতাশ? ভালোবাসা বুঝি হৃদয় সমীপে আঁচ? ভালোবাসা মানে রক্ত চেটেছে বাঘ! ভালোবাসা ছিল ঝর্ণার পাশে একা সেতু নেই আকাশে পারাপার ভালাবাসা ছিল সোনালি ফসলে হওয়া ভালোবাসা ছিল
Continue readingযদি নির্বাসন দাও – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াবো আমি বিষপান করে মরে যাবো । বিষন্ন আলোয় এই বাংলাদেশ নদীর শিয়রে ঝুঁকে পড়া মেঘ প্রান্তরে দিগন্ত নির্নিমেষ- এ আমারই সাড়ে তিন হাত ভূম যদি নির্বাসন দাও, আমি
Continue readingমন ভাল নেই – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
মন ভাল নেই মন ভাল নেই মন ভাল নেই কেউ তা বোঝে না সকলি গোপন মুখে ছায়া নেই চোখ খোলা তবু চোখ বুজে আছি কেউ তা দেখেনি প্রতিদিন কাটে দিন কেটে যায় আশায় আশায় আশায়
Continue readingশুধু কবিতার জন্য – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
শুধু কবিতার জন্য এই জন্ম, শুধু কবিতার জন্য কিছু খেলা, শুধু কবিতার জন্য একা হিম সন্ধেবেলা ভুবন পেরিয়ে আসা, শুধু কবিতার জন্য অপলক মুখশ্রীর শান্তি একঝলক; শুধু কবিতার জন্য তুমি নারী, শুধু কবিতার জন্য এতো
Continue reading