আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্য মারা যাবো ছোট ঘাসফুলের জন্যে একটি টলোমলো শিশিরবিন্দুর জন্যে আমি হয়তো মারা যাবো চৈত্রের বাতাসে উড়ে যাওয়া একটি পাঁপড়ির জন্যে একফোঁটা বৃষ্টির জন্যে আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্যে
Continue readingCategory: হুমায়ুন আজাদ
হুমায়ুন আজাদ (২৮ এপ্রিল ১৯৪৭ – ১১ আগস্ট ২০০৪; ১৪ বৈশাখ ১৩৫৪ – ২২ শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) ছিলেন একজন বাংলাদেশী কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, সমালোচক, গবেষক, ভাষাবিজ্ঞানী, কিশোর সাহিত্যিক এবং রাজনৈতিক ভাষ্যকার।
হুমায়ুন আজাদ বাংলাদেশের প্রধান প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক লেখক যিনি ধর্ম, মৌলবাদ, প্রতিষ্ঠান- ও সংস্কারবিরোধিতা, নিরাবরণ যৌনতা, নারীবাদ ও রাজনীতি বিষয়ে নির্মম সমালোচনামূলক বক্তব্যের জন্য ১৯৮০-র দশক থেকে ব্যাপক পাঠকগোষ্ঠীর দৃষ্টি আর্কষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। গতানুগতিক চিন্তাধারা তিনি সচেতনভাবে পরিহার করতেন। তাঁর নারী (১৯৯২), দ্বিতীয় লিঙ্গ (২০০১) এবং পাক সার জমিন সাদ বাদ (২০০৪) গ্রন্থ তিনটি বিতর্কের ঝড় তোলে এবং নারী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল।
অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ ছিলেন একজন প্রথাবিরোধী ও বহুমাত্রিক মননশীল লেখক। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৬০টির বেশি।
আজাদের ১০টি কাব্যগ্রন্থ, ১৩টি উপন্যাস, ২২টি সমালোচনা গ্রন্থ, ৮টি কিশোরসাহিত্য, ৭টি ভাষাবিজ্ঞানবিষয়ক গ্রন্থ তাঁর জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়। ১৯৯২ সালে নারীবাদী গবেষণামূলক গ্রন্থ নারী প্রকাশ করে গোটা দেশে সাড়া তোলেন। বইটি ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ছিলো। এ গ্রন্থ তাঁর বহুল আলোচিত গবেষণামূলক কাজ হিসেবেও স্বীকৃত। তাঁকে ১৯৮৬ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ২০১২ সালে সামগ্রিক সাহিত্যকর্ম এবং ভাষাবিজ্ঞানে বিশেষ অবদানের জন্যে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করা হয়। তাঁর রচিত কিশোরসাহিত্য ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত আব্বুকে মনে পড়ে জাপানি ভাষায় অনূদিত হয়েছে ২০০৩ সালে।
জীবনের শেষার্ধে অকুতোভয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা, সামরিক শাসনের বিরোধিতা, নারীবাদী বক্তব্য এবং একই সঙ্গে নিঃসংকোচ যৌনবাদিতার জন্যে তিনি ব্যাপক পাঠকগোষ্ঠির দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিশ্বাস এবং ব্যক্তিগত অভীষ্ট তাঁর সাহিত্যকে প্রবলভাব প্রভাবান্বিত করেছিল। লেখার মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে তীব্র আক্রমণের কারণে ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি হত্যা প্রচেষ্টার শিকার হন।
আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে – হুমায়ুন আজাদ
আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়েআমার খাদ্যে ছিলো অন্যদের আঙুলের দাগ,আমার পানীয়তে ছিলো অন্যদের জীবাণু,আমার নিশ্বাসে ছিলো অন্যদের ব্যাপক দূষণ।আমি জন্মেছিলাম, আমি বেড়ে উঠেছিলাম,আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে।আমি দাঁড়াতে শিখেছিলাম অন্যদের মতো,আমি হাঁটতে শিখেছিলাম অন্যদের মতো,
Continue readingগোলাপ ফোটাবো – হুমায়ুন আজাদ
ওষ্ঠ বাড়িয়ে দাও গোলাপ ফোটাবো, বঙ্কিম গ্রীবা মেলো ঝরনা ছোটাবো। যুগল পাহাড়ে পাবো অমৃতের স্বাদ, জ্ব’লে যাবে দুই ঠোঁটে একজোড়া চাঁদ। সুন্দরীর নৌকো ঢুকাবো বঙ্গোপসাগরে, অতলে ডুববো উত্তাল আশ্বিনের ঝড়ে। শিউলির বোঁটা থেকে চুষে নেবো
Continue readingউপহার – হুমায়ুন আজাদ
বুড়ো হয়ে গেছি বেশ, কিছুটা শিথিল; বুঝতে পারিনি তাই তোমার একুশতম জন্মদিনে, তিলোত্তমা, কী নিয়ে যাই । তুমি ঘাসফুল, স্বনলতা, রোদ, পৌষের তুষের আগুন, কোকিলের ডাক, কৃষ্ণচূড়া, রক্তজবা, নদী, রঙিন ফাগুন। Views: 1,696
Continue readingআমাদের মা – হুমায়ুন আজাদ
আমাদের মাকে আমরা বলতাম তুমি, বাবাকে আপনি। আমাদের মা গরিব প্রজার মত দাঁড়াতো বাবার সামনে, কথা বলতে গিয়ে কখনোই কথা শেষ ক’রে উঠতে পারতোনা। আমাদের মাকে বাবার সামনে এমন তুচ্ছ দেখাতো যে মাকে আপনি বলার
Continue readingবাঙলা ভাষা – হুমায়ুন আজাদ
শেকলে বাঁধা শ্যামল রূপসী, তুমি-আমি, দুর্বিনীত দাসদাসী- একই শেকলে বাঁধা প’ড়ে আছি শতাব্দীর পর শতাব্দী। আমাদের ঘিরে শাঁইশাঁই চাবুকের শব্দ, স্তরে স্তরে শেকলের ঝংকার। তুমি আর আমি সে-গোত্রের যারা চিরদিন উৎপীড়নের মধ্যে গান গায়- হাহাকার
Continue readingতুমি হাতখানি রাখো – হুমায়ুন আজাদ
প্রিয়তমা, তুমি হাতখানি রাখো আমার গুমোট বুকে। শুনতে পাচ্ছো শব্দ? কে যেনো হাতুড়ি ঠুকে চলছে? সেখানে এক মিস্ত্রি থাকে,যে বানিয়ে চলেছে এক শবাধার । কার জন্যে জানো? আমার, আমার । উল্লাসে বিদ্বেষে নিরন্তর সে হাতুড়ি ঠুকছে
Continue readingআমার অশ্রু – হুমায়ুন আজাদ
আমার অশ্রু এবং কষ্টরাশি থেকে ফুটে উঠে ফুল থরে থরে অফুরান, এবং আমার দীর্ঘশ্বাসে বিকশিত হয় নাইটিংগেলের গান। বালিকা, আমাকে যদি তুমি ভালোবাসো, তোমার জন্য সে ফুল আনবো আমি— এবং এখানে তোমার দ্বারের কাছে নাইটিংগেলেরা
Continue readingফুলেরা জানতো যদি – হুমায়ুন আজাদ
ফুলেরা জানতো যদি আমার হৃদয় ক্ষতবিক্ষত কতোখানি, অঝোরে ঝরতো তাদের চোখের জল আমার কষ্ট আপন কষ্ট মানি । নাইটিংগেল আর শ্যামারা জানতো যদি আমার কষ্ট কতোখানি-কতোদুর, তাহলে তাদের গলায় উঠতো বেজে আরো ব হু বেশী
Continue readingব্যাধিকে রূপান্তরিত করছি মুক্তোয় – হুমায়ুন আজাদ
একপাশে শূন্যতার খোলা, অন্যপাশে মৃত্যুর ঢাকনা, প’ড়ে আছে কালো জলে নিরর্থক ঝিনুক। অন্ধ ঝিনুকের মধ্যে অনিচ্ছায় ঢুকে গেছি রক্তমাংসময় আপাদমস্তক বন্দী ব্যাধিবীজ। তাৎপর্য নেই কোন দিকে- না জলে না দেয়ালে-তাৎপর্যহীন অভ্যন্তরে ক্রমশ উঠছি বেড়ে শোণিতপ্লাবিত
Continue readingআমার কুঁড়েঘরে – হুমায়ুন আজাদ
আমার কুঁড়েঘরে নেমেছে শীতকাল তুষার জ’মে আছে ঘরের মেঝে জুড়ে বরফ প’ড়ে আছে গভীর ঘন হয়ে পাশের নদী ভ’রে বরফ ঠেলে আর তুষার ভেঙে আর দু-ঠোঁটে রোদ নিয়ে আমার কুঁড়েঘরে এ-ঘন শীতে কেউ আসুক আমার
Continue readingভালো থেকো – হুমায়ুন আজাদ
ভালো থেকো ফুল, মিষ্টি বকুল, ভালো থেকো। ভালো থেকো ধান, ভাটিয়ালি গান, ভালো থেকো। ভালো থেকো মেঘ, মিটিমিটি তারা। ভালো থেকো পাখি, সবুজ পাতারা। ভালো থেকো। ভালো থেকো চর, ছোট কুড়ে ঘর, ভালো থেকো। ভালো
Continue readingআমাকে ভালোবাসার পর – হুমায়ুন আজাদ
আমাকে ভালবাসার পর আর কিছুই আগের মত থাকবে না তোমার, যেমন হিরোশিমার পর আর কিছুই আগের মতো নেই উত্তর থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত। যে কলিংবেল বাজে নি তাকেই মুর্হুমুহু শুনবে বজ্রের মত বেজে উঠতে এবং
Continue readingসব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে – হুমায়ুন আজাদ
আমি জানি সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে। নষ্টদের দানবমুঠোতে ধরা পড়বে মানবিক সব সংঘ-পরিষদ;- চ’লে যাবে অত্যন্ত উল্লাসে চ’লে যাবে এই সমাজ সভ্যতা-সমস্ত দলিল- নষ্টদের অধিকারে ধুয়েমুছে, যে-রকম রাষ্ট্র আর রাষ্ট্রযন্ত্র দিকে দিকে চ’লে গেছে
Continue reading